ঢাকা ০১:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অবরুদ্ধ গাজায় আরও বড় সংকটের আশঙ্কা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:০৪:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ অক্টোবর ২০২৩ ১৭৭ বার পড়া হয়েছে
NEWS396 অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলের হামলায় বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। প্রতিদিনই মৃত্যু, আহত এবং বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা বাড়ছে। এমন ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে আরও প্রকট সংকটের মুখে পড়তে পারে গাজাবাসী। সেখানে দেখা দিতে পারে, ডায়রিয়া, কলেরার মতো সংক্রামক রোগ। এক প্রতিবেদনে এমনটি জানিয়েছে আল জাজিরা।
গাজার বাসিন্দা ওয়াসিম মুশতাহার চার সন্তান প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে স্কুল যেতে পারে না। ভুগোল,গণিত শেখার পরিবর্তে তাদেরকে এখন পানি কীভাবে কম ব্যবহার করতে হবে সেটি শিখতে হচ্ছে।

ওয়াসিম মশতাহা বলেন, ‘প্রতিদিন আমি প্রত্যেকের জন্য পানির বোতল ভর্তি করি। যা পাই তাই দিয়ে সবাইকে চলার জন্য বলি।’

ইসরায়েল গাজার উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ হামলা চালাচ্ছে। তারা সেখান থেকে ফিলিস্তিনিদের সরে যেতে বলে। এরপরই অনেক লোক ঘরবাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। মুশতাহা তার স্ত্রী এবং চার সন্তানকে নিয়ে খান ইউনিসে খালার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। ইসরায়েলের মারাত্মক হামলার মধ্যে এখানকার বাসিন্দারা তাদের পরিবার ও বন্ধুদের জন্য দরজা খুলে দিয়েছে।

বিশ্বব্যাপী অলাভজনক অক্সফামের পানি ও স্যানিটেশন অফিসার হিসেবে মুশতাহা তার চারপাশে আসন্ন জনস্বাস্থ্য বিপর্যয় দেখতে পাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘মানুষ রাস্তায়, দোকানে, মসজিদে, তাদের গাড়িতে বা রাস্তায় ঘুমাচ্ছে।’

তার পরিবার এখন ২০০ বর্গমিটারের একটি অ্যাপার্টমেন্টে একশ জন লোকের সাথে বাস করছে। তারপরও তিনি নিজেদের ভাগ্যবান মনে করেন। কারণ এই আশ্রয়টুকুও অনেকের নেই।

খান ইউনিস থেকে ওয়াসিম আল জাজিরাকে বলেন, ‘প্রতিদিন প্রত্যেকের জন্য এক বোতল পানি ভরি এবং এই পানি দিয়ে সারা দিনের কাজকর্ম সারতে পরামর্শ দিই। প্রথম দিকে তাদের খুব কষ্ট হতো। তবে এখন বেশ মানিয়ে নিচ্ছেন।’

ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যবিধি পণ্যগুলো সচল থাকা কয়েকটি সুপারমার্কেট থেকে উধাও হয়ে গেছে এবং ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের পরিচালিত সৌরবিদ্যুৎভিত্তিক লবণ বিমুক্তকরণ স্থাপনাগুলো থেকে বিক্রি করা পানির দাম ৭ অক্টোবর থেকে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ওই দিন হামাসের হামলার আগে এ পানির দাম ছিল ৩০ শেকেল (৭ দশমিক ৪০ ডলার), কিন্তু এখন দাম ৬০ শেকেলে (১৫ ডলার) উন্নীত হয়েছে।ওয়াসিম হিসাব করে দেখেছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম পানিটুকু নিঃশেষ হয়ে যাবে। এরপর কী ঘটবে, তা তিনি জানেন না। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আমরা বাজারে যাব এবং যেটুকু পানি পাওয়া যায়, তা-ই কিনব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অন্ধকার চোখে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছি।’

হামাসের হামলার পর ফিলিস্তিন ছিটমহলে সম্পূর্ণ অবরোধ ঘোষণা করার পর ইসরায়েল গাজায় পানি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

এর প্রেক্ষাপটে অক্সফাম ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ায় কলেরাসহ পানিবাহিত অন্য মারাত্মক সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ছে সেখানে। দ্রুত জরুরি মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া না হলে গাজায় জনস্বাস্থ্যে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

অবরুদ্ধ গাজায় আরও বড় সংকটের আশঙ্কা

আপডেট সময় : ১২:০৪:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ অক্টোবর ২০২৩

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলের হামলায় বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। প্রতিদিনই মৃত্যু, আহত এবং বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা বাড়ছে। এমন ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে আরও প্রকট সংকটের মুখে পড়তে পারে গাজাবাসী। সেখানে দেখা দিতে পারে, ডায়রিয়া, কলেরার মতো সংক্রামক রোগ। এক প্রতিবেদনে এমনটি জানিয়েছে আল জাজিরা।
গাজার বাসিন্দা ওয়াসিম মুশতাহার চার সন্তান প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে স্কুল যেতে পারে না। ভুগোল,গণিত শেখার পরিবর্তে তাদেরকে এখন পানি কীভাবে কম ব্যবহার করতে হবে সেটি শিখতে হচ্ছে।

ওয়াসিম মশতাহা বলেন, ‘প্রতিদিন আমি প্রত্যেকের জন্য পানির বোতল ভর্তি করি। যা পাই তাই দিয়ে সবাইকে চলার জন্য বলি।’

ইসরায়েল গাজার উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ হামলা চালাচ্ছে। তারা সেখান থেকে ফিলিস্তিনিদের সরে যেতে বলে। এরপরই অনেক লোক ঘরবাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। মুশতাহা তার স্ত্রী এবং চার সন্তানকে নিয়ে খান ইউনিসে খালার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। ইসরায়েলের মারাত্মক হামলার মধ্যে এখানকার বাসিন্দারা তাদের পরিবার ও বন্ধুদের জন্য দরজা খুলে দিয়েছে।

বিশ্বব্যাপী অলাভজনক অক্সফামের পানি ও স্যানিটেশন অফিসার হিসেবে মুশতাহা তার চারপাশে আসন্ন জনস্বাস্থ্য বিপর্যয় দেখতে পাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘মানুষ রাস্তায়, দোকানে, মসজিদে, তাদের গাড়িতে বা রাস্তায় ঘুমাচ্ছে।’

তার পরিবার এখন ২০০ বর্গমিটারের একটি অ্যাপার্টমেন্টে একশ জন লোকের সাথে বাস করছে। তারপরও তিনি নিজেদের ভাগ্যবান মনে করেন। কারণ এই আশ্রয়টুকুও অনেকের নেই।

খান ইউনিস থেকে ওয়াসিম আল জাজিরাকে বলেন, ‘প্রতিদিন প্রত্যেকের জন্য এক বোতল পানি ভরি এবং এই পানি দিয়ে সারা দিনের কাজকর্ম সারতে পরামর্শ দিই। প্রথম দিকে তাদের খুব কষ্ট হতো। তবে এখন বেশ মানিয়ে নিচ্ছেন।’

ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যবিধি পণ্যগুলো সচল থাকা কয়েকটি সুপারমার্কেট থেকে উধাও হয়ে গেছে এবং ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের পরিচালিত সৌরবিদ্যুৎভিত্তিক লবণ বিমুক্তকরণ স্থাপনাগুলো থেকে বিক্রি করা পানির দাম ৭ অক্টোবর থেকে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ওই দিন হামাসের হামলার আগে এ পানির দাম ছিল ৩০ শেকেল (৭ দশমিক ৪০ ডলার), কিন্তু এখন দাম ৬০ শেকেলে (১৫ ডলার) উন্নীত হয়েছে।ওয়াসিম হিসাব করে দেখেছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম পানিটুকু নিঃশেষ হয়ে যাবে। এরপর কী ঘটবে, তা তিনি জানেন না। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আমরা বাজারে যাব এবং যেটুকু পানি পাওয়া যায়, তা-ই কিনব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অন্ধকার চোখে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছি।’

হামাসের হামলার পর ফিলিস্তিন ছিটমহলে সম্পূর্ণ অবরোধ ঘোষণা করার পর ইসরায়েল গাজায় পানি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

এর প্রেক্ষাপটে অক্সফাম ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ায় কলেরাসহ পানিবাহিত অন্য মারাত্মক সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ছে সেখানে। দ্রুত জরুরি মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া না হলে গাজায় জনস্বাস্থ্যে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হবে।