গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ
অ্যাসবেস্টস জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি : নিষিদ্ধের দাবি ওশি ফাউন্ডেশনের
- আপডেট সময় : ১০:৩৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৪ ১০৫ বার পড়া হয়েছে
অ্যাসবেস্টস জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক উল্লেখ করে নিষিদ্ধের দাবিতে আয়োজিত প্রেস কনফারেন্সে লিখিত বক্তব্য রাখছেন ওশি ফাউন্ডেশনের নিবার্হী পরিচালক আমিনুর রশীদ চৌধুরী রিপন
মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক অ্যাসবেস্টস এর আমদানি, ব্যবহার ও বিপনন নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অকুপেশনাল সেফটি, হেলথ ও এনভায়রমেন্ট ফাউন্ডেশন-ওশি ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ ব্যান এসবেসবেটস নেটওয়ার্ক-বি-ব্যান। এছাড়াও জনস্বাস্থ্য অধিকার সূরক্ষার স্বার্থে এ্যাসবেসটস যুক্ত পণ্য ব্যবহারের গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কেও দেশবাসীকে সতর্ক করা করছে।
সম্প্রতি ওশি ফাউন্ডেশন ও দক্ষিণ কোরিয়ার এশিয়া সিটিজেন সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হেলথ (ইকো হেলথ) এর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ নিয়ে ১৫ই এপ্রিল সোমবার, ঢাকা রিপোর্টারস ইউনিটি’র সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওশি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও বি-ব্যান এর সদস্য সচিব আমিনুর রশীদ চোধুরী রিপন এ দাবি জানান। তিনি সাংবাদিকদের জানান, গবেষণায় বাংলাদেশে তৈরি সিমেন্ট শিট, একটি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের বেবি টেলকম পাউডার, গাড়ির ব্রেক শু ও সীতাকুন্ডে জাহাজ ভাঙা শিল্প এলাকা থেকে সংগৃহীত মাটির নমুনা বিশ্লেষণ করে সিমেন্ট শিটে ৫০ ভাগ ও ব্রেক শু’তে ১৫ ভাগ ক্রিসোটাইল অ্যাসবেসটসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বেবি টেলকম পাউডার ও সীতাকুন্ড এলাকার মাটির যে নমুনা পরীক্ষার জন্য নেয়া হয়েছিল তাতে অ্যাসবেসটস পাওয়া যায়নি। তবে আরও নমুনা পরীক্ষার প্রয়োজন আছে বলে জানান আমিনুর রশীদ চৌধুরী রিপন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অ্যাসবেসটস একটি ধূসর রঙের খনিজ যা সহজেই দীর্ঘ নমনীয় ফাইবারে বিভক্ত হয়ে যায়। এটি অগ্নিরোধী, বিদ্যুৎ অপরিবাহী এবং রাসায়নিকভাবে প্রতিরোধী। ধূলিকণা হিসাবে শ্বাস নেওয়া হলে এটি গুরুতর ফুসফুসের রোগ সৃষ্টি করতে পারে। অ্যাসবেসটসের কারণে ক্যান্সার হয়; যার পরিণাম অকাল মৃত্যু।
লিখিত বক্তব্যে আমিনুর রশীদ চোধুরী রিপন অ্যাসবেসটস এর অবাধ ব্যবহারে জনস্বাস্থ্যের উপর যে হুমকি তৈরি হচ্ছে তা প্রতিরোধে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের দাবিতে ছয়টি সুপারিশ তুলে ধরেন । এগুলো হলো ১. জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর হুমকি বিবেচনায় নিয়ে অবিলম্বে অ্যাসবেসটস এর আমদানী, ব্যবহার ও বিপনন নিষিদ্ধ করা। ২. গত ২ ডিসেম্বর, ২০২১ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশে সকল প্রকার অ্যাসবেসটস এর ব্যবহার বন্ধকরণ বিষয়ক সভায় ক্রিসোটাইল অ্যাসবেসটস এর ক্ষতিকারক প্রভাব বিষয়ে গবেষণাসহ অন্যান্য যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছিল তা বাস্তবায়ন করা। ৩. অ্যাসবেসটস এর ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ এবং এর বিকল্প উপকরণ নির্ধারণে সুপারিশ প্রেরণের জন্য ওশি ফাউন্ডেশনসহ এই বিষয়ে কর্মরত সংশ্লিষ্ট বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, বুয়েট ও বিএসএমএমইউ এবং সরকারের শিল্প, শ্রম, স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কারিগরি কমিটি গঠন করা। ৪. জাহাজ ভাঙা শিল্পে ইতোমধ্যে যেসব শ্রমিক অ্যাসবেসটসিস এ আক্রান্ত হয়েছে তাদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ এবং সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা। ৫. দেশের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সূরক্ষায় অবিলম্বে ক্রিসোটাইল এসবেসটস যুক্ত সিমেন্ট রুফ শিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন, বিক্রয় ও ভোক্তা পর্যায়ে ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা এবং গণমাধ্যমের সহায়তায় এ বিষয়ে গণ সচেতনতা সৃষ্টি করা। ৬. ব্যবসাক্ষেত্রে মানবাধিকার চর্চার দৃষ্টিকোন থেকে অ্যাসবেসটস আমদারিকারক ও শিল্পখাতে ব্যবহারকারীদের অ্যাসবেসটস এর ক্ষতিকারক দিক বিবেচনায় নেয়া এবং শ্রমিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওশি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আমিনুর রশীদ চোধুরী রিপন বলেন, অ্যাসবেস্টস মিশ্রিত পণ্য সস্তা হলেও এর যে স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও ভবিষ্যতের চিকিৎসা খরচ তা অনেক বেশি। সিমেন্ট শিটের পরিবর্তে টিনের ঢেউটিন ব্যবহারের তাগিদ দেন তিনি।
ওশি ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারপারসন ড. এস এম মোর্শেদ বলেন, অ্যাসবেস্টস এর ক্ষতিকারক দিক বিবেচনায় বিশ্বের ৬২টি দেশে এর উৎপাদন, আমদানি ও বিপনন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অতি সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও তার জনগণের ক্যান্সার আক্রান্তের ঝুঁকি বিবেচনায় অ্যাসবেস্টস এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে। প্রতিবেশি দেশ নেপাল এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। বাংলাদেশেও অবিলম্বে অ্যাসবেস্টস নিষিদ্ধের দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি হেলথ সায়েন্স এর ডিপার্টমেন্ট অব অকুপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রমেন্টাল হেলথ এর অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হোসেন ফারুকী বলেন, অ্যাসবেসটস এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে কেউ এর সংস্পর্শে আসেন; তার ২০ বছর পরে গিয়েও ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
সাংবাদিক ও গবেষক আতাউর রহমান, অ্যাসবেসটসের ক্ষতিকারক দিক তুলে ধরে একে নিষিদ্ধ করতে গণমাধ্যমের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।