আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
সম্প্রতি দলটির উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানা গেছে। উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে জামায়াত এই সিদ্ধান্ত নিল।
বিএনপির সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে জামায়াত। নির্বাচন ঠেকাতে কৌশলে যুগপৎ আন্দোলনেও ছিল দলটি।
দলীয় সূত্র জানায়, জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান জামিনে মুক্তির পর এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি আরো আগে থেকে নিচ্ছিলেন দলটির নেতারা।
জানতে চাইলে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয়ভাবে আমরা এই বিষয়ে এখনই কিছু বলছি না।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে যাঁরা আগ্রহী, তাঁদের প্রার্থী করা হবে। কাউকে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য দল থেকে চাপ দেওয়া হবে না। দলের নেতারা জানান, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর দলীয় প্রার্থীদের অনেকে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, দলের কেউ যদি উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে চান তাঁদের প্রার্থী করার ব্যাপারে দলের স্থানীয় দায়িত্বশীলদের বলা হয়েছে। দলটির জেলা কমিটি নির্বাচনের সার্বিক বিষয় সমন্বয় করছে।
দলীয় সূত্র বলছে, আগে যাঁরা উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন কিংবা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের অনেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। সামাজিকভাবে যাঁরা প্রতিষ্ঠিত এবং যাঁদের দল ও দলের বাইরে গ্রহণযোগ্যতা আছে, এমন নেতাদের প্রার্থী হতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
যেহেতু উচ্চ আদালত জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে, তাই দলের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন।
নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে দলের নেতাদের যুক্তি হলো, নির্বাচনপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হবেন এবং সংগঠন করার সুযোগ পাবেন। এই সুযোগ কাজে লাগাতে চান দলের নীতিনির্ধারকরা।
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত এবং জামায়াতের আমিরের মুক্ত হওয়ার মধ্যে সংশ্লিষ্টতা আছে বলে অনেকে বলাবলি করছে। জামায়াতের একটি অংশের মধ্যে এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
দলটির কয়েকজন নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ছেলে ডা. রাফাত সাদিকসহ জামায়াত আমিরের জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার মামলা থাকার পরও কিভাবে তিনি মুক্তি পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত আরো অনেক প্রশ্ন তৈরি করল।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কৌশল কী হবে, সেই সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। গত সোমবার অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে প্রায় সব সদস্য দলগতভাবে নির্বাচনে না গিয়ে কৌশল গ্রহণ করার পক্ষে মত দেন। তবে নিজ উদ্যোগে কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইলে তাঁকে বাধা দেওয়া উচিত হবে না বলেও মন্তব্য করেন।
জামায়াতের এই সিদ্ধান্তে বিএনপি নেতারা অবাক হননি। তবে সরকার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জামায়াত তাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমাদের কী বলার আছে?’
তবে জামায়াত নেতারাও মনে করেন, তাঁদের এই সিদ্ধান্তে বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব্ব তৈরি করবে না। কারণ এটি জাতীয় নির্বাচন নয়।