এক শতাংশ ভোট পড়লেও লিগ্যালি নির্বাচন সঠিক
- আপডেট সময় : ০১:১৫:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ অক্টোবর ২০২৩ ২১৯ বার পড়া হয়েছে
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আমরা ইনক্লুসিভ নির্বাচন পছন্দ করি। এটা আমাদের দায়িত্ব না যে কাউকে নির্বাচনে নিয়ে আসা।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে যদি এক শতাংশ ভোট পড়ে, ৯৯ শতাংশ না পড়ে, তাহলে লিগ্যালি নির্বাচন সঠিক। প্রশ্ন উঠবে লেজিটিমেসি নিয়ে, লিগ্যালিটি নিয়ে নয়। কাজেই লিগ্যালিটি এবং লেজিটিমেসি নিয়ে কনফ্লিক্ট আছে।
বুধবার (০৪ অক্টোবর) নির্বাচন কমিশন ভবনে এক ওয়ার্কশপে তিনি এসব কথা বলেন।
সিইসি বলেন, বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৯ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদের শেষ ৯০ দিনের মধ্যে যেকোনো সময় জাতীয় নির্বাচন করতে হবে। ৯০ দিনের ক্ষণগণনা শুরু হবে ১ নভেম্বর। নির্বাচন কমিশন আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ভোট করতে চায়।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা ইনক্লুসিভ নির্বাচন পছন্দ করি। এটা আমাদের দায়িত্ব না যে কাউকে নির্বাচনে নিয়ে আসা। তবুও আমরা আমাদের নৈতিক অবস্থান থেকে অনেকবার দাওয়াত করেছি। বলেছি, আসুন, আমাদের সঙ্গে চা খান। ডিও লেটার পর্যন্ত লেখেছি। এর বেশি আমরা আর কিছু করতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, আমরা নির্বাচনের লেজিটিমেসি নিয়ে মাথা ঘামাবো না। আমরা দেখব ভোটটা অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ হয়েছে কি না। আমরা দেখব, যদি মাত্র এক শতাংশ লোকও ভোট দেয় তাহলে ভোটার যারা এসেছিলেন তাদেরকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়নি, ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে এবং তারা নির্বিঘ্নে, স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
সিইসি বলেন, লিগ্যালি একটা জিনিস হলে সেটা লিগ্যালি ভ্যালিড। কিন্তু লেজিটিমেসি একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস, যেখানে পারসেপশন তৈরি হয়। আমি ওই বিরোধে যেতে চাচ্ছি না। নির্বাচন কমিশন চেষ্টা করবে একটি ল’ ফুল নির্বাচন করতে। আর রাজনৈতিক সমাজ লেজিটিমেসি নিয়ে ফাইট করবে। নির্বাচন কমিশন এই বিষয় নিয়ে ফাইট করবে না।
সংলাপের প্রশ্নে হাবিবুল আউয়াল বলেন, সবাই বলে থাকেন সংলাপের মাধ্যমে একটা সমঝোতার প্রয়োজনীয়তার কথা। আমরাও বলেছি, সংলাপের মাধ্যমে সমাঝোতা করে যদি একটি অনুকূল পরিবেশ গড়ে উঠত, তাহলে আমাদের জন্য কাজটা সহজসাধ্য হতো।
বাংলাদেশের নির্বাচন প্রশ্নে বিদেশিদের অবস্থান প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা মানি বা না মানি, বিদেশের কিছু লোক এখানে এসে কথা বলেন। অথচ আমরা আমেরিকায় গিয়ে কিন্তু কথা বলতে পারছি না। এটার একটা কারণ হতে পারে যে আমেরিকা হয়তো শক্তিতে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। এটা হতেও পারে। আবার না–ও হতে পারে। আমি সেটা জানি না। ওরা আসছে আমাদের দেশে কথা বলতে।
ভোটের আগে আগে পোলিং এজেন্টদের গ্রেফতারের বিষয়ে সিইসি বলেন, যদি সম্ভাব্য পোলিং এজেন্টদের তালিকা কমিশনকে দেয় এবং সেখান থেকে অনেককে গ্রেফতার করা হয়, তাহলে বুঝব সেটি বিশেষ উদ্দেশে করা হয়েছে। আমরা আশা করবো এটি হবে না। আমরা বারবার করে সরকারকে এটা জানাব। যদি গ্রেফতার করতে হয় তাহলে ছয় মাস আগেই সবাইকে করে ফেলেন। আর যদি গ্রেফতার করতে হয় তাহলে নির্বাচনের পরে। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা উচিত হবে না।
পোলিং এজেন্ট প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, আপনারা প্রায় বলেন এজেন্টদের নাম তো দেবে না, কারণ পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে ফেলবে। তাদের শক্তিশালী প্রতিপক্ষ মারধর করতে পারে, নানা কারণ থাকতে পারে। বক্তব্য শুনেছি যে সাধারণত ভোটের দিন সকাল পর্যন্ত পোলিং এজেন্টদের নামটা খুবই গোপন রাখা হয়। যাতে তারা নিরাপদে ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হতে পারেন। অনেক সময় দেখি ১০০ জনের জায়গায় ১৫০ জন পোলিং এজেন্টের নাম দেয়। পরে যদি আমরা দেখি ভোটের আগে ১৫০ জন গ্রেফতার হয়ে গেছেন। তখন আমাদের একটা নেগেটিভ ইমপ্রেশন নিতে হবে। কেন তারা এক মাস আগে অ্যারেস্ট হলেন না, কেন তারা দুই মাস আগে অ্যারেস্ট হলেন না। ভোটের আগের দিন সবাই উধাও হয়ে গেল কেন?
নির্বাচন কমিশন সৎভাবে ভোট করতে চায় এমনটা জানিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, কোনো দলের পক্ষে পক্ষপাতিত্ব করতে আমরা দায়িত্ব গ্রহণ করিনি। সে জন্য একটা হতে একটা লিস্ট যদি আগে দেওয়া হয়। এর পরে থেকে যদি একে একে অ্যারেস্ট হতে থাকে। দেখা গেল ১০ জন বাকি আছে ১৪০ জনই অ্যারেস্ট হয়ে গেল। এটা মিন করে যে তাদের অ্যারেস্ট করা হয়েছে বিশেষ একটা উদ্দেশে। তবে আমরা আশা করব এই ক্ষেত্র কখনই হবে না। আমরা সরকারকে জানাব, যদি তাদের অ্যারেস্ট করতে হয় ছয় মাস আগেই সবাইকে অ্যারেস্ট করে ফেলেন। আর যদি না করেন তবে নির্বাচনের পরে অ্যারেস্ট করে ফেলেন। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা ঠিক হবে না, এতে আমরা কলঙ্কিত হবো বলে মনে করি। পোলিং এজেন্ট না থাকলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। একজন শক্তিশালী প্রার্থী দুর্বল পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়।