ঢাকা ০৩:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্যাসসংকটে টঙ্গিতে মুড়ি-চিড়ার উৎপাদন ব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১২:৫৭:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ মার্চ ২০২৪ ১৭৪ বার পড়া হয়েছে

টঙ্গীর একটি মিলে চিড়া-মুড়ি উৎদন করা হচ্ছে

NEWS396 অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
গ্যাস, বিদ্যুৎ ও ধান-চালের মূল্যবৃদ্ধি এবং গ্যাসের তীব্র সংকটের কারণে গাজীপুরের টঙ্গীতে মুড়ি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পর্যাপ্ত গ্যাস না পাওয়ায় টঙ্গীর পাঁচটি চিড়া-মুড়ি কলের মধ্যে দুটির উত্পাদন এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। নানা কারণে ভোক্তারা এখন মুড়ির দিকে ঝুঁকছে কম। তাই মুড়ির পরিবর্তে চিড়ার চাহিদা তুলনামূলকভাবে বেড়েছে।

মানভেদে প্রতি কেজি মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১৪০ টাকায়। সারা বছরে মুড়ির যে চাহিদা থাকে, তার ৭০ শতাংশ প্রয়োজন হয় শুধু রমজান মাসে।সোমবার সরেজমিনে টঙ্গীর বিভিন্ন চিড়া-মুড়ি কল ও পাইকারি বাজার ঘুরে জানা যায়, রমজানের ইফতারে মুড়ি একটি প্রধান অনুষঙ্গ হলেও চাহিদা কমেছে কয়েক গুণ। চিড়া-মুড়ি কল মালিক এবং পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ধান-চাল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় মুড়ি উৎপাদন প্রায় বন্ধের পথে।

ফলে খুচরা বাজারে পর্যাপ্ত মুড়ির সরবরাহ না থাকায় ভোক্তারা বেশি মূল্যের মুড়ির পরিবর্তে চিড়া বা ইফতারের অন্যান্য অনুষঙ্গের প্রতি ঝুঁকছে।
টঙ্গী মিলগেট মিতালী চিড়া কল, গাউসিয়া মুড়ির মিল, টঙ্গী বাজার মদিনা মার্কেটের সুলতান ট্রেডার্স, চাচা-ভাতিজা চিড়া-মুড়ি স্টোর, রাশেদ চিড়া-মুড়ি অ্যান্ড গুড় ট্রেডার্স, বরিশাল মুড়ি স্টোর, কুমিল্লা মুড়ি ট্রেডার্স, ফারুক মুড়ি স্টোর, বিল্লাল মুড়ি স্টোর, তানভীর ট্রেডার্সসহ প্রায় ১৬টি মুড়ির আড়ত থেকে ঢাকা, আশুলিয়া, সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ টন মুড়ি সরবরাহ করা হয়ে থাকে। তবে কেজিপ্রতি ১০-১৫ টাকা মূল্যবৃদ্ধি ও ভেজাল মুড়ির কারণে ক্রেতারা এখন মুড়ির প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে।বরিশালের হাতে ভাজা ‘মুথামুড়ি’ বা ‘ঘিকজ’ মুড়ির পাইকারি দর প্রতি কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, ‘১৬ মুড়ি’ প্রতি কেজি ৭২ থেকে ৭৫ টাকা, মেশিনে তৈরি ‘হাইসুপার’ প্রতি কেজি ৮৪ টাকা ও ‘সুপার’ মুড়ি প্রতি কেজি ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মুড়ি উৎপাদনকারীরা বলছেন, রমজান উপলক্ষে দেশের প্রতিটি জেলায় স্থানীয়ভাবে মুড়ি তৈরি করে তা বাজারজাত করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। টঙ্গীর আড়তদাররা মেশিনে ভাজা মুড়ি বেশি বিক্রি করলেও হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা আগের চেয়ে বেশি।

টঙ্গী বাজারে মুড়ি কিনতে আসা জাকির হোসেন বলেন, ‘বাজারে মুড়ি কম আবার দামও বেশি। তাই মুড়ির পরিবর্তে চিড়া নিলাম।’

টঙ্গী বাজার তানভীর ট্রেডার্সের মালিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘রমজানে মুড়ির চাহিদা অন্য সময়ের চেয়ে বেশি থাকে।তবে এবার মুড়ির চাহিদা অনেকটা কম।’

 

মিলগেট মিতালী চিড়াকলের মালিক নুরুল করিম পারভেজ বলেন, ‘প্রতি মাসে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা গ্যাস বিল দিই, কিন্তু গ্যাস পাই না বললেই চলে। এ ছাড়া চাল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম ও শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় মুড়ি উৎপাদন আপাতত বন্ধ রেখেছি।’

এদিকে বিভিন্ন কারখানার বিরুদ্ধে মুড়িতে ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানোর অভিযোগ পাওয়া গেলেও কোনো কারখানার মালিকই বিষয়টি স্বীকার করেন না। মুড়িতে কেন কেমিক্যাল মেশানো হয়? এমন প্রশ্নের জবাবে গাউসিয়া মুড়ির মিলের মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চকচকে ও সাদা করতে মুড়িতে সোডিয়াম হাইড্রো সালফাইড, ইউরিয়া ও কাস্টার্ড পাউডার মেশানো হয়। আমরা চেষ্টা করি কেমিক্যাল ছাড়া মুড়ি উত্পাদন ও বিক্রি করতে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

গ্যাসসংকটে টঙ্গিতে মুড়ি-চিড়ার উৎপাদন ব্যাহত

আপডেট সময় : ১২:৫৭:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ মার্চ ২০২৪
গ্যাস, বিদ্যুৎ ও ধান-চালের মূল্যবৃদ্ধি এবং গ্যাসের তীব্র সংকটের কারণে গাজীপুরের টঙ্গীতে মুড়ি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পর্যাপ্ত গ্যাস না পাওয়ায় টঙ্গীর পাঁচটি চিড়া-মুড়ি কলের মধ্যে দুটির উত্পাদন এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। নানা কারণে ভোক্তারা এখন মুড়ির দিকে ঝুঁকছে কম। তাই মুড়ির পরিবর্তে চিড়ার চাহিদা তুলনামূলকভাবে বেড়েছে।

মানভেদে প্রতি কেজি মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১৪০ টাকায়। সারা বছরে মুড়ির যে চাহিদা থাকে, তার ৭০ শতাংশ প্রয়োজন হয় শুধু রমজান মাসে।সোমবার সরেজমিনে টঙ্গীর বিভিন্ন চিড়া-মুড়ি কল ও পাইকারি বাজার ঘুরে জানা যায়, রমজানের ইফতারে মুড়ি একটি প্রধান অনুষঙ্গ হলেও চাহিদা কমেছে কয়েক গুণ। চিড়া-মুড়ি কল মালিক এবং পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ধান-চাল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় মুড়ি উৎপাদন প্রায় বন্ধের পথে।

ফলে খুচরা বাজারে পর্যাপ্ত মুড়ির সরবরাহ না থাকায় ভোক্তারা বেশি মূল্যের মুড়ির পরিবর্তে চিড়া বা ইফতারের অন্যান্য অনুষঙ্গের প্রতি ঝুঁকছে।
টঙ্গী মিলগেট মিতালী চিড়া কল, গাউসিয়া মুড়ির মিল, টঙ্গী বাজার মদিনা মার্কেটের সুলতান ট্রেডার্স, চাচা-ভাতিজা চিড়া-মুড়ি স্টোর, রাশেদ চিড়া-মুড়ি অ্যান্ড গুড় ট্রেডার্স, বরিশাল মুড়ি স্টোর, কুমিল্লা মুড়ি ট্রেডার্স, ফারুক মুড়ি স্টোর, বিল্লাল মুড়ি স্টোর, তানভীর ট্রেডার্সসহ প্রায় ১৬টি মুড়ির আড়ত থেকে ঢাকা, আশুলিয়া, সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ টন মুড়ি সরবরাহ করা হয়ে থাকে। তবে কেজিপ্রতি ১০-১৫ টাকা মূল্যবৃদ্ধি ও ভেজাল মুড়ির কারণে ক্রেতারা এখন মুড়ির প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে।বরিশালের হাতে ভাজা ‘মুথামুড়ি’ বা ‘ঘিকজ’ মুড়ির পাইকারি দর প্রতি কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, ‘১৬ মুড়ি’ প্রতি কেজি ৭২ থেকে ৭৫ টাকা, মেশিনে তৈরি ‘হাইসুপার’ প্রতি কেজি ৮৪ টাকা ও ‘সুপার’ মুড়ি প্রতি কেজি ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মুড়ি উৎপাদনকারীরা বলছেন, রমজান উপলক্ষে দেশের প্রতিটি জেলায় স্থানীয়ভাবে মুড়ি তৈরি করে তা বাজারজাত করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। টঙ্গীর আড়তদাররা মেশিনে ভাজা মুড়ি বেশি বিক্রি করলেও হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা আগের চেয়ে বেশি।

টঙ্গী বাজারে মুড়ি কিনতে আসা জাকির হোসেন বলেন, ‘বাজারে মুড়ি কম আবার দামও বেশি। তাই মুড়ির পরিবর্তে চিড়া নিলাম।’

টঙ্গী বাজার তানভীর ট্রেডার্সের মালিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘রমজানে মুড়ির চাহিদা অন্য সময়ের চেয়ে বেশি থাকে।তবে এবার মুড়ির চাহিদা অনেকটা কম।’

 

মিলগেট মিতালী চিড়াকলের মালিক নুরুল করিম পারভেজ বলেন, ‘প্রতি মাসে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা গ্যাস বিল দিই, কিন্তু গ্যাস পাই না বললেই চলে। এ ছাড়া চাল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম ও শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় মুড়ি উৎপাদন আপাতত বন্ধ রেখেছি।’

এদিকে বিভিন্ন কারখানার বিরুদ্ধে মুড়িতে ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানোর অভিযোগ পাওয়া গেলেও কোনো কারখানার মালিকই বিষয়টি স্বীকার করেন না। মুড়িতে কেন কেমিক্যাল মেশানো হয়? এমন প্রশ্নের জবাবে গাউসিয়া মুড়ির মিলের মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চকচকে ও সাদা করতে মুড়িতে সোডিয়াম হাইড্রো সালফাইড, ইউরিয়া ও কাস্টার্ড পাউডার মেশানো হয়। আমরা চেষ্টা করি কেমিক্যাল ছাড়া মুড়ি উত্পাদন ও বিক্রি করতে।’